শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া কে এই শরীফ জহির??
ডেস্ক রিপোর্ট ::
আওয়ামীলীগের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউস, সাবেক মন্ত্রী পলকসহ উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ও সরকারী কর্মকর্তাদের দহররম মহররম সম্পর্ক থাকলেও ক্ষমতার পটপরিবর্তনে ১৮০ ডিগ্রী বাক নিয়ে তিনি হয়ে গেছেন বর্তমান সরকারের লোক। বিগত সরকারের সময় শত শত কোটি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া কে এই শরীফ জহির?
পানামা পেপার্সে নাম আসা বাংলাদেশিদের নিয়ে কয়েক বছর আগে থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদদফতরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে আসছিল। বিষয়টি তখন আলোচিত হয়ে উঠলে উচ্চ আদালত থেকে তাদের তালিকা চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
পরে ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ৬৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা হাইকোর্টের (উচ্চ আদালত) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে দাখিল করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পানামা পেপারসে ৪৩ ও প্যারাডাইস পেপারসে ২৬ জনের নাম রয়েছে। সেই তালিকাতেও এই শরীফ জহিরের নাম রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বর্তমান সময়ে আবার সুবিধাভোগী হওয়ায় পূনরায় আলোচনায় এসেছে কে এই শরীফ জহির, কী তার পরিচয়? বাড়িই বা কোথায়?- এসব নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে মানুষের মুখে মুখে। ২০১৯ সালের ৩০ মে এর একটি নথি থেকে দেখা যায়, শরীফ জহিরের মালিকানাধীন অনন্ত ডেনিম টেকনোলজি লিঃ কর কমিশনার বরাবর মামলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বেশ কয়েকজন রাজস্ব কর্মকর্তা।
যুগ্ন কমিশনার জনাব মশিউর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সাতজন কর্মকর্তা শুল্ককর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করে ফাঁকির বিষয়টি উদঘাটন করেন। তদন্তকারী টীমে ছিলেন ঢাকার কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকার উপ কমিশনার রেজভী আহম্মেদ, রাজস্ব কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন, রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাকের আহমেদ , সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ , সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়।
বন্ড সুবিধায় কাচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে মর্মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২১/০৫/২০১৯ তারিখ তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং অনন্ত ডেনিমের জেনারেল ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম চৌধুরীর নিকট থেকে লিখিত বিবৃতি নেয়া হয়।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে দেখা যায় বন্ড সুবিধায় ২৩৪১১৩৪ কেজি ডেনিম ফেব্রিক্স এর শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১০৮,৪৩,৩৪,৪৪৬ টাকা এবং উহার উপর প্রযোজ্য শুল্ক করাদির পরিমান ৯৯,৬২,৯২,০৪১ টাকা ও ২৯১১৪৭৫ কেজি ডাইস কেমিক্যালের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১১১৪৩৫০১৯ যার বিপরীতে প্রযোজ্য শুল্ক করাদির পরিমান ৪০৬৭৪২৮৮ টাকা। মোট ১০৩,৬৯,৬৬৩২৯ (কথায়ঃ একশত তিন কোটি উনসত্তর লক্ষ্য ছিষ্টটি হাজার টাকা অনন্ত ডেনিম টেকনোলজি লিঃ এর নিকট আদায় যোগ্য। উল্লেখ্য প্রতিষ্ঠানটি দ্য কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ১৩ এর সঙ্গে পঠিতব্য বন্ড লাইসেন্সের শর্ত ও একই এক্ট এর সেকশন ৮৬, ৯৭ ও ১১৪ এর বিধান এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী দন্ডযোগ্য এবং দন্ডিত অর্থ আদায়যোগ্য। কিন্তু প্রতিবারের মতো নানান টালবাহানা এবং আহমেদ কায়কাউসের সাথে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে বের হয়ে যায় চতুর এই শরীফ জহির।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউসিবিএল ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান এই শরীফ জহির বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের (বিজিএমইএ) সদস্য। অনন্ত গ্রুপের এমডি শরীফ জহিরের চট্টগ্রাম ইপিজেডে জেড অ্যান্ড জেড ইন্টিমেন্টস কারখানা রয়েছে । এ ছাড়া আদমজী ইপিজেডে ৫টি কারখানা রয়েছে।