নারায়ণগঞ্জ কারাগারে দুর্নীতির রাজত্ব: জেল সুপার ও জেলার যেন আলাদিনের চেরাগ

বিশেষ প্রতিনিধি ::
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার ফোরকান ওয়াহিদ ও জেলার মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে উঠেছে ব্যাপক দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মের অভিযোগ। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, জেল সুপার ফোরকান ওয়াহিদ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বড় বড় কারাগারে বদলি হন। তিনি ইতিপূর্বে চাঁদপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেখা যায়, সেখানে তিনি ব্যাপক দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মের সাথে লিপ্ত ছিলেন। জানা যায়, জেল সুপার ফোরকান ওয়াহিদ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাঁদপুর জেলা কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বদলি হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এসেই শুরু করেছেন ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম।
দেখা যায়, তিনি কারাগারের কিছু কারারক্ষীকে ব্যবহার করে যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা কারাগারে বন্দী আছেন, তাদেরকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। এছাড়া টাকার বিনিময়ে বন্দী এবং বন্দীদের আত্মীয়দেরকে তার অফিস কক্ষে এনে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী বাইরে থেকে কারাগারের অভ্যন্তরে খাবার দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও, জেল সুপারের বিশেষ বিবেচনায় অনেকেই বাইরে থেকে কারাগারের ভেতরে খাবার দিয়েছেন।
এছাড়া দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন সময় বিএনপির বিভিন্ন সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছের লোক বলে পরিচয় প্রদান করে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। এই বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা বলেন, "আমরা এই নামের কাউকে চিনি না। যদি কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অন্যায়-অনিয়ম করে থাকে, তাহলে আপনারা আপনাদের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।"
জেল সুপারের সমস্ত অবৈধ কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সর্বপ্রধান কারারক্ষী মো. বেলাল হোসেন। জানা যায়, এই কর্মকর্তা তদবির ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে কর্মরত আছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অন্যায় ও অনিয়মের সাথে জড়িত এই কর্মকর্তা। নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মামুনুর রশিদের ব্যাপক অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র পাওয়া যায়। তিনি যেখানেই বদলি হন, সেখানেই নামে-বেনামে গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়।
দেখা যায়, তিনি এর আগে ঝিনাইদহ, যশোর ও কুমিল্লাসহ আরও বিভিন্ন কারাগারে কর্মরত ছিলেন। ঝিনাইদহে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, তার নামে-বেনামে ঝিনাইদহের বিভিন্ন জায়গায়, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস, ভুটিয়ারগাতি ও হাটগোপালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। কোথাও নিজ নামে, আবার কোথাও স্বজনদের নামে জমি কিনেছেন। তার বাড়ি, গাড়ি ও ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট থাকলেও, সম্প্রতি ঝিনাইদহে দুইতলা বাড়িসহ প্রায় আড়াই কোটি টাকার জমি কিনতে বায়না করেছেন। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, যশোর ও ফরিদপুরেও তার নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
তিনি এখন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ব্যাপক দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মের সাথে লিপ্ত। দেখা যায়, তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বন্দীদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন। অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে সরকারি মোবাইলের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের বেশি বন্দীদের কথা বলার সুযোগ দিয়ে থাকেন। কারাগারের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন থেকে অনৈতিকভাবে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি আরও অনেক অপকর্মের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। এই বিষয়ে জেল সুপার ফোরকান ওয়াহিদ ও জেলার মামুনুর রশিদের মোবাইল নাম্বারে কয়েকবার চেষ্টা করা হলে তারা কল রিসিভ করেননি।