মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ | চৈত্র ৪, ১৪৩১

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
চৈত্র ৪, ১৪৩১
প্রশাসনের নীরবতায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম

মোঃ রিদুয়ানের নেতৃত্বে সীমান্তে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি ও অবৈধ ব্যবসার রাজত্ব!

শাহাদত হোসেন

প্রকাশিত: ২০২৫-০২-১৮ ১৬:২৬:১৯

কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকায় মোঃ রিদুয়ান (পিতা: ফরিদ আলম) নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি ভয়ংকর চক্র দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে তিনি এলাকার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন, সীমান্তে অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন এবং যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছেন। তার এই অপরাধের জাল এতটাই বিস্তৃত যে, ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে ভয় পান, কারণ তারা জানেন – রিদুয়ান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিশোধ নিতে দেরি করবে না।

অভিযোগ অনুযায়ী, মোঃ রিদুয়ান সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক চাঁদা দিতে বাধ্য করেন। তার বক্তব্য স্পষ্ট – "বর্ডারে থাকতে হলে আমার চাঁদা দিতে হবে, না হলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেবো!" এই হুমকির কারণে নিরীহ মানুষ তার চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হয়। শুধু ব্যবসায়ী নয়, সাধারণ গ্রামবাসীরাও তার দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পায় না। তার পৃষ্ঠপোষকতায় চক্রের সদস্যরা গ্রামের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাদের বিরুদ্ধে "ফিটিং" মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।

সীমান্ত এলাকায় রিদুয়ানের নেতৃত্বে একটি সুসংগঠিত চোরাচালান চক্র গড়ে উঠেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি নিয়মিত মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে খাদ্যপণ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করেন এবং সেগুলো কক্সবাজার ও অন্যান্য এলাকায় উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন। অপরদিকে, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে অবৈধভাবে পণ্য রপ্তানি করা হয়, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন। সীমান্তের নিরাপত্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্যও হুমকি স্বরূপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

রিদুয়ানের অবৈধ কর্মকাণ্ড একা চালানো সম্ভব নয়, তাই তিনি একটি ভয়ংকর চক্র গড়ে তুলেছেন। তার অন্যতম সহযোগী মোঃ সাইফুল (পিতা: মৃত আব্দুল হক), যিনি নিজেকে ছাত্রদলের নেতা ও সমন্বয়ক দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে তাদের ব্যবসায় অংশীদারিত্ব দাবি করেন এবং সীমান্তে অবৈধ পণ্য পারাপারের মূল দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও রাসেল মোহাম্মদ সিপাত ও হেলাল উদ্দিন হেতাও এই চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও তারা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিন ধরে এই অপরাধীদের হাত থেকে মুক্তি চাইছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয়দের মতে, রিদুয়ান ও তার চক্র প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যকে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের রক্ষাকবচ হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলেও তা ধামাচাপা পড়ে যায়।

ভুক্তভোগীরা জানান, যখনই কেউ রিদুয়ানের অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, তখনই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয় অথবা ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এলাকাবাসীর দাবি, এই চক্র যদি দ্রুত নির্মূল না করা হয়, তাহলে সীমান্ত এলাকা ক্রমশই চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাবে। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে রিদুয়ান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

SStv