বিএনপি পরিচয়ে প্রতারণার সাম্রাজ্য
প্রতারণার সাম্রাজ্য গড়েছেন কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিপ্লোমা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

বিশেষ প্রতিনিধি ::
ঢাকা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিপ্লোমা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আফজালুর রহমানের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি পদে থেকেও তিনি নিজেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এবং মুগদা এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাকরি, জমি-ফ্ল্যাট দখল ও রাজনৈতিক পদ দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
আফজালুর রহমান নিজেকে কারা অধিদপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি বলেন, তার সঙ্গে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রী-সাংসদদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে বহু পরিবার তাদের সঞ্চিত অর্থ হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, তিনি চাকরির আশ্বাস দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিলেও পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করেন না। টাকা ফেরত চাইতে গেলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং মামলা করার হুমকি দেন।
গভীর অনুসন্ধানে জানা যায়, আফজালুর রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে জমি ও ফ্ল্যাট দখলের চক্র গড়ে তুলেছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় জমি ও ফ্ল্যাট দখল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন। অনেকেই তার প্রভাবশালী পরিচয় দেখে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জমির প্রকৃত মালিকদের ভয় দেখিয়ে জমি দখল করে নিয়েছেন এবং অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি কারাগারে অসুস্থ বন্দীদের ঠিকমতো চিকিৎসা প্রদান না করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আওয়ামিলীগের যেসকল নেতারা কারাগারে বন্দী আছে তাদেরকে সেবা প্রদান করে এবং নানারকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে।
আফজালুর রহমান নিজেকে বিএনপির বড় নেতা পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক পদ বাণিজ্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক ও প্রভাবশালী নেতাদের ঘনিষ্ঠতার কথা বলে বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদ বিক্রি করেন। তাঁর এই পদ বাণিজ্যের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আফজালুর রহমান প্রতারণার টাকার পাহাড় গড়েছেন এবং সেই টাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তার প্রতারণার জালে পা দিয়ে অনেক নিরীহ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে নিজেকে আরও প্রভাবশালী হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠতা আছে, আমি চাইলে যেকোনো কিছু করতে পারি।" এই প্রভাব ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে তিনি নিরীহ মানুষদের কণ্ঠরোধ করেন।
ভুক্তভোগীরা তার অপকর্মের বিচার ও হারানো অর্থ ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তবে তার রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার জোরের কারণে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় তিনি এখনো বহাল তবিয়তে তার প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।