ক্ষমতাধর হাবীবের তুঘলকী কাণ্ড-১
আ:লীগের দোসর নির্বাহী প্রকৌশলী হাবীব বহাল তবিয়তে

বিশেষ প্রতিনিধি ::
মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনে এখনও আওয়ামী লীগের দোসররা বহাল তবিয়তে কাজ করছে। এদের মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব। স্বৈরাচারের দোসর এ প্রকৌশলী নিজ নামে "হাবীরের প্রযোজনায় শেখ মুজিবের আত্মজীবনী পাঠ" একাধিক অনুষ্ঠান করেছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা এখন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে লুটপাটের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ক্ষমতাধর প্রকৌশলী আহসান হাবীবের আ:লীগের দোসর হয়েও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের একাধিক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছে। এমনকি নতুন করে দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে আ:লীগ নেতা ও আওয়ামীলীগ ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপনে গোপনে বৈঠক করছেন বলে একাধিক স্থানীয় ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি মামলায় দু'বার তার বিরুদ্ধে সমন জারি করলেও তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। পরে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে প্রতারণা এ মামলায় জেল খাটেন তিনি। এখানেই শুধু নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীবের তুঘলকি কাণ্ডের শেষ নয়। তিনি পাবনায় কর্মকালীন সরকারি অর্থ লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। এজন্য নিজের নামে একাধিক টিন নম্বর বানান তিনি। একাধিন টিন বানিয়েও প্রশাসনের চোখ এড়াতে পারেনি তিনি। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে জালে আকটা পড়েন। এজন্য তার বিরুদ্ধে পাবনা দুর্নীতি কমিশনে মামলা হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়। শুধু তাই নয় সরকারি কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে সরকারের অনুমতি ব্যতীত অননুমোদিতভাবে প্রকৌশলী আহসান হাবীব বিদেশ ভ্রমণ করেন। যা তার পাসপোর্ট পর্যালোচনা করলে বেরিয়ে আসবে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ীতে রয়েছে একটি বিশাল বাগানবাড়ী, একরের পর একর জমি। সাভার ও মোহাম্মাদপুরসহ রাজধানীতের রয়েছে একাধিক ফ্লাট ও প্লট।
সূত্র জানায়, প্রকৌশলী আহসান হাবীব চাকুরী হতে বরখাস্ত হলেও তাকে বেশি দিন চাকুরীর বাহিরে থাকতে হয়নি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লুটপাটের রাজ্যের অন্যতম অংশীদার প্রকৌশলী আহসান হাবিব অদৃশ্য শক্তির কেরামতিতে নোয়াখালীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিভাবে তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হলো বা কিভাবে তিনি আবার চাকুরিতে ফিরে এলেন তা পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। বর্তমানের ঠাকুরগাঁওয়ের দায়িত্বে থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের সহযোগী হিসেবে গোপনে গোপনে কাজ করে যাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও এলাকা থেকে শিবিরকর্মী ও ছাত্রদল নেতাদকর্মীদের ঘায়েল করতে সম্প্রতি ঢাকায় এসে তার ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ( আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য) নামধারী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছেন, অনিয়মের এবং দুর্নীতির অভিযোগে নোয়াখালী থেকে ঠাকুরগাওঁয়ে বদলি হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে গোপনে কয়েকবার বৈঠক করেছেন। নতুন করে দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্র করতে একটা ছক আঁকছেন তিনি।
সূত্রপ্রাপ্ত তথ্যমতে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসান হাবিববের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মেনর রয়েছে। কাজ না করে টাকা উত্তোলন, প্রকল্পগুলো নিম্নমানের ম্যাটারিয়াল সরবরাহ, ঠিকাদার কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্যসহ আত্মীয়-স্বজন ও নিজের নামে নামধানী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেই কাজ ভাগিয়ে নেওয়া সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ থাকলেও তৎকালীন স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের লোক হওয়ায় অধিদপ্তরের কেউ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেনি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলি অধিদপ্তরের একাধিক শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন, আহসান হাবীরের মতো এসব আওয়ামী দোসরদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে এর দায় পড়বে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন থেকে দেশ মুক্ত হলেও মুক্ত হয়নি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এখনো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলি অধিদপ্তরে আওয়ামীলীগের প্রেতাত্মা বসে আছে। তাই জরুরী ভিত্তিতে এসব প্রেতাত্মাদের জনস্বাস্থ্য প্রকেৌশল অধিদপ্তর থেকে তাড়াতে হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের এ প্রকৌশলী আহসান হাবীব আওয়ামী লীগের অত্যন্ত কাছের লোক ছিলেন। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িত থাকার মৌখিক ভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। পরে উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের চাপে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (রংপুর সার্কেল) আবুল কালাম আজাদ এ প্রতিবেদককে জানান, ঠাকুরগাঁও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছে আমিও লোক মুখে শুনেছি। এর আগে নানা অনিয়মের কারণে নোয়াখালী থেকে তাকে এখানে বদলী করা হয়েছে। তাছাড়া আরো কিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগের বিষয় নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাক্ষাতে দেখা করে বক্তব্য দিবেন। পরে তাকে হোয়াটআপস ও কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
আগামী আরো তিন পর্বে থাকছে- অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকার মালিক , কমিশন বাণিজ্য ও কাজ না করে টাকা উত্তোলন, নারী লোভী প্রকৌশলী হাবীবে বহু বিবাহ ও প্রেমে ফেলে ৭ মেয়ের সর্বনাশ।